বারাসত কে এন সি রোড সংলগ্ন প্রায় ৫.৮ একর জমি নিয়েই বর্তমানে রয়েছে ঐতিহ্যের বারাসত প্যারীচরণ সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় জানা যায় ১৮৪৬ সালে জেল খানার একটি ঘরে ১২৫ জন ছাত্র নিয়ে পথ চলা শুরু হয় বারাসত প্যারীচরণ সরকার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের। সেই থেকে টানা নবছর প্রধান শিক্ষক হিসাবে এই স্কুলের দায়িত্ব সামলান এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বাবু প্যারিচরণ সরকার। এই স্কুল স্থাপন করতে সহযোগিতা করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কালীকৃষ্ণ মিত্র সহ বিশিষ্টরা। তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট স্যার চার্লস বিলি ট্রেভরের উদ্যোগে ও শিক্ষাবিদ কালীকৃষ্ণ মিত্রের প্রচেষ্টায় জেল খানার ঘরেই বিদ্যালয়ের কাজকর্ম চলতে থাকে। এরপর ১৮৫৩ সালে স্থানীয় চাঁদা ও কর্তৃপক্ষের দানের টাকায় এই বিদ্যালয় ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়।এরপরই চার্লস বিলি ট্রেভরের পরিবর্তে আসেন মিস্টার জ্যাকসন। তারপর কালীকৃষ্ণ মিত্র ও মিস্টার জ্যাকসন সহ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ওই বছরই স্থায়ী ভাবে বিদ্যালয় স্থাপন হয়। এই স্কুল থেকে অনেক নামি ব্যক্তিত্ব পড়াশুনা করার পর সমাজের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা পান। যার মধ্যে অন্যতম হলেন স্বামী শিবানন্দ মহারাজ,স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, মণীশ ঘটক, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সহ বিশিষ্টরা। বাবু প্যারিচরণ সরকার ছাড়াও এখানে শিক্ষকতা করতেন যজ্ঞেশ্বর ঘোষ, প্রসন্নকুমার সরকার সহ শিক্ষাবিদরা। বর্তমানে এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ চক্রবর্তী জানান ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই স্কুল বাংলার নবজাগরণ সৃষ্ট বিদ্যালয়। পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমন নেই যেখানে এই স্কুলের সাফল্য স্পর্শ করেনি। এই স্কুলের প্রাক্তনীরা পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সঙ্গে গবেষণার কাজ করেছেন বলেও জানান তিনি। প্রতিবছরই এখানকার বহু ছাত্র ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পায় বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন এত গুণীজন এই স্কুল থেকে পড়াশুনা করেছেন যা আজও তাদের কৃতিত্বে তাদের বুক গর্বে ভরে যায়। স্কুল সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ১৬৫০। প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়ারা রয়েছেন এখানে। রয়েছেন ৫৮ জন শিক্ষকও। গত বছরও এই স্কুল থেকে দুজন ছাত্র আই আই টি-তে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই স্কুলে প্রতিবছরই অসাধারণ সাফল্য আসে । বিজ্ঞান কলা ও বাণিজ্য বিভাগ রয়েছে এই স্কুলে। একইসঙ্গে রয়েছে উন্নত মানের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী ও একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীতেও ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
